পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যাঁরা তাদের মেধাশ্রমের কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁরা মানুষের মুক্তির জন্য, কল্যাণের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। অর্জিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর মেধাশ্রম দিয়ে তাঁরা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন মুক্তির পথ, অগ্রগতির পথ।
কাজ তোমার এলাকার/পরিচিত কোনো ব্যক্তির মেধাশ্রমের ব্যাপারে একটি অনুচ্ছেদ লিখ এবং তা শিক্ষককে দেখাও। তোমার লেখা অনুচ্ছেদ তোমার সহপাঠীদের পড়তে দাও, তাদের লেখাটিও তুমি পড়। |
আনা ফ্র্যাংক ১৯২৯ সালের ১২ই জুন জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু সেখানে ইহুদিদের উপরে নির্যাতন এতো বেড়েছিল যে তাঁর পরিবার নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম শহরে পালিয়ে আসে। ১৯৪০ সালে সেই শহরও নাৎসি বাহিনী দখল করে নেয়। তখন আনা ফ্রাংকের পরিবার একটি বাড়ির গোপন কুঠুরিতে আত্মগোপন করে। ত্রয়োদশ জন্মদিনে উপহার পাওয়া একটি ডায়েরিতে কিশোরী আনা ফ্রাংক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ১২ই জুন ১৯৪২ থেকে ১লা আগস্ট ১৯৪৪ পর্যন্ত সময়টিকে তুলে ধরেছেন। বিশ্বযুদ্ধের এমন হৃদয়স্পর্শী ও মর্মান্তিক লিখিত বর্ণনা আনা ফ্রাংকের আগে আর কেউ করেন নি।
১৯৪৪ সালের ৪ঠা আগস্ট গোপন কুঠুরির সবাই ধরা পড়ে যান। তাঁর বাবা অটো ফ্রাংক ছাড়া সবাই বন্দিশিবিরগুলোয় মৃত্যুবরণ করেন।
আনা ফ্রাংক জার্মানির হ্যানোভার শহরের বার্জেন-বেলসন বন্দিশিবিরে ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আনার দিনলিপিগুলো ১৯৪৭ সালে তাঁর বাবা ডাচ ভাষায় প্রকাশ করেন। বইয়ের নাম দেন 'হেট অ্যাকটারবুস' (বাংলায় 'গোপন কুঠুরি')। পরে বইয়ের নাম পাল্টে রাখা হয় আনা ফ্রাংকের ডায়েরি। কেউ কেউ এটির নাম দেন 'দি ডায়েরি অব এ ইয়ং গার্ল'। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ভাষায় আনা ফ্রাংকের ডায়েরির কয়েক শত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। কিশোরী লেখিকা তাঁর দেখা ও শোনা প্রতিদিনের ঘটনাসমূহের বর্ণনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন হিটলারের হাতে অবরুদ্ধ থাকা দুঃসহ দিনগুলোর কথা। বিশ্বযুদ্ধের সেই দিনগুলোর বর্ণনা লিখতে গিয়ে তাঁকে অনেক ভাবতে হয়েছে, ভাষার যথাযথ ব্যবহার করতে হয়েছে এবং জীবন্ত কথাগুলোকে গুছিয়ে লিখতে হয়েছে। এছাড়া আনা তার দিনলিপি একদল কাল্পনিক বন্ধু-বান্ধবীকে উদ্দেশ করে লিখেছেন- এখানেই তাঁর চমৎকার কল্পনা শক্তির প্রমাণ পাই আমরা। কাজেই আনা ফ্রাংকের ডায়েরি তাঁর মেধাশ্রমের উদাহরণ।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন দুর্ভিক্ষ নিয়ে অনেকগুলো ছবি এঁকেছেন। বাংলা ১১৭৬ সালে এদেশে অনেক বড় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। ঐ দুর্ভিক্ষে এই ভূখণ্ডের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ (প্রায় এক কোটি) মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এরপরও বাংলায় অনেকবার দুর্ভিক্ষ হয়। বাংলা ১৩৫০ এর মন্বন্তর নিয়ে তিনি অনেক ছবি এঁকেছেন। সেসব ছবি থেকে আমরা জানতে পারি, বুঝতে পারি কতটা কষ্ট হয়েছিল সেসময় মানুষের, কতটা করুণ ও হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি আমরা। দুর্ভিক্ষের সেসব ছবি আঁকতে গিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে অনেক মেধাশ্রম দিতে হয়েছে।
এসব মেধাশ্রম আমাদের ইতিহাস জানতে সাহায্য করে। অতীতে ঘটে যাওয়া নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাকে আমাদের চোখে জীবন্ত করে তোলে। আমরা সেইসব ঘটনা বা দিনের কথা জানতে আগ্রহী হই। অতীতের সে অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি যা আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও বেশি নিরাপদ ও কল্যাণমুখী করে। তাছাড়া আমরা নিত্য যে সব সমস্যার মুখোমুখি হই তা সমাধানে বা দূর করার জন্যও প্রয়োজন হয় মেধাশ্রম।
Read more